তোমরা এর মাঝে অনেকবার কম্পিউটার কী এবং সেটা কীভাবে কাজ করে সেটা গড়ে এসেছ। একটা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারগুলোকে সাধারণত একটা নেটওয়ার্ক দিয়ে পরস্পরের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়, যেন একটা কম্পিউটার অন্য একটা কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, আবার প্রয়োজন হলে একটা কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের Resource ব্যবহার করতে পারে। এই ধরনের নেটওয়ার্ককে LAN (Local Area Network) বলা হয়ে থাকে। আজকাল LAN তৈরি করার জন্য একটা সুইচের সাথে অনেকগুলো কম্পিউটার যুক্ত করে সুইচগুলোকে পরস্পরের সাথে যুক্ত করে দিতে হয়। যখন একটা কম্পিউটারকে অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে হয় সেটি যদি তার
নেটওয়ার্ক নিজের সুইচের সাথে যুক্ত কম্পিউটারের মাঝে পেয়ে যায় তাহলে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। সেখানে না পেলে অন্য সুইচে খোঁজ করতে থাকে।
একটি প্রতিষ্ঠানের একটি LAN কে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের অন্য একটি LAN এর সাথে যুক্ত করার জন্য রাউটার (Router) ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক (Network) এর নিজেদের মাঝে Inter Connection করে Networking কে Internet বলা হয়। এই মুহূর্তে পৃথিবীর প্রায় নয় বিলিয়ন কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইস ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত আছে এবং এই সংখ্যাটি প্রতিদিনই বাড়ছে। কাজেই ইন্টারনেট হচ্ছে নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক যেখানে প্রাইভেট, পাবলিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি স্থানীয় বা বৈশ্বিক সব ধরনেরনেটওয়ার্ক জড়িত হয়েছে। এই বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য নানা ধরনের ইলেকট্রনিকস, ওয়্যারলেস এবং ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে এখন নানা ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করা যায় এবং নানা ধরনের সেবা নেওয়া যায়। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যেতে পারে, ইন্টারনেটে রয়েছে নানা ধরনের ওয়েবসাইট, ইলেকট্রনিক মেইল, টেলিফোন এবং ভিডিও যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান, সামাজিক নেটওয়ার্ক, বিনোদন, শিক্ষা এবং গবেষণা টুল এবং নানা ধরনের ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা। সারা পৃথিবীর মানুষ এখন ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে এবং আমাদের জীবনধারার একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে ইন্টারনেটে পৃথিবীর সকল মানুষেরই যোগাযোগ করার সমান সুযোগ আছে বলে নানা ধরনের প্রচারের সাথে সাথে অপপ্রচার এবং অপব্যবহারের সুযোগও তৈরি হয়েছে। নানা ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার তৈরি করে নেটওয়ার্কের ক্ষতি করা, বিদ্বেষ এবং হিংসা ছড়ানো, আপত্তিকর তথ্য উপস্থাপনের সাথে সাথে অপরাধীরাও তাদের কার্যক্রমে গোপনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে।
কিছু নেতিবাচক বিষয় থাকার পরও ইন্টারনেট এই সভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদান এবং এই প্রথমবার পৃথিবীর সকল মানুষ সমানভাবে একটি প্রযুক্তিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ভবিষ্যতের পৃথিবীতে এই নেটওয়ার্কের কী প্রভাব পড়বে দেখার জন্য সারা পৃথিবীর মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।
ইলেকট্রনিক মেইলের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ই-মেইল এবং ই-মেইল বলতে আমরা বোঝাই কম্পিউটার, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন ইত্যাদি ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একজন বা অনেকজনের সাথে ডিজিটাল তথ্য বিনিময় করা। 1971 সালে প্রথম ই-মেইল পাঠানো হয় এবং মাত্র 25 বছরের ভেতরে পোস্ট অফিস ব্যবহার করে পাঠানো চিঠি থেকে ই-মেইলের সংখ্যা বেশি হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ই-মেইলের ব্যবহার ছাড়া আমরা একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না।
কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে ই-মেইল পাঠাতে হলে সব সময়ই একটি ই-মেইল সার্ভারের দরকার হয়। এই ই-মেইল সার্ভার ব্যবহারকারীদের ই-মেইল সংরক্ষণ করে এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্য ব্যবহারকারীদের সাথে ই-মেইল বিনিময় করে। ই- মেইল বিনিময় করার আরেকটি এবং বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে ইন্টারনেটের দেওয়া ই- মেইল সার্ভিস। তাদের মাঝে Gmail, Yahoo, Hotmail ইত্যাদি ই-মেইলের সেবা শুধু যে বিনা মূল্যে দেওয়া হয় তা নয়, তারা ব্যবহারকারীদের ই-মেইল সংরক্ষণ করার দায়িত্বও গ্রহণ করে থাকে।ই-মেইল পাঠানোর জন্য প্রথমেই যিনি পাঠাবেন এবং যিনি পাবেন দুজনেরই ই-মেইলের ঠিকানার দরকার হয়। তোমরা সবাই ই-মেইল ঠিকানার সাথে পরিচিত এবং সবাই লক্ষ করেছ ই-মেইল ঠিকানাটি @ বর্ণটি দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। যদি abc@def.com একটি ই-মেইল ঠিকানা হয়ে থাকে তাহলে @ এর পরের অংশটুকু হচ্ছে ডোমেইন নেইম, যেটা দিয়ে বোঝানো হয় ব্যবহারকারী কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। প্রথম অংশটুকু হচ্ছে ব্যবহারকারীর কোনো ধরনের পরিচয়।
একটি ই-মেইল একাধিক গ্রাহকের কাছে পাঠানো যায়। প্রয়োজনে ই-মেইলকে অন্য একজনকে “কার্বন কপি” হিসেবে (CC) পাঠানো যায়। ই-মেইলের শুরুতে বিষয় হিসেবে ই-মেইলের বক্তব্যটির একটি শিরোনাম লেখা যায়। শুধু তাই নয় ই-মেইলের বিষয়বস্তু লেখার পাশাপাশি তার সাথে অন্য কোনো ডকুমেন্ট বা ছবি সংযুক্ত করে পাঠিয়ে দেওয়া যায়।
এটি বলা বাহুল্য মাত্র আমরা ই-মেইল ছাড়া এখন একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না।
ই-মেইল, ইন্টারনেট কিংবা ইন্টারনেটভিত্তিক নানা ধরনের সামাজিক নেটওয়ার্ক আমাদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। একই সাথে এই প্রযুক্তিগুলোর অপব্যবহার আমাদের জীবনে খুব সহজেই বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। কাজেই এটা বলা বাহুল্য মাত্র এই অত্যন্ত শক্তিশালী প্রযুক্তিগুলো আমাদের দায়িত্বশীলের মতো ব্যবহার করতে হবে, এটি শুধু তথ্যপ্রযুক্তি নয়, সকল প্রযুক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ।